কক্সবাজার, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর

লাইলাতুল কদর অর্থ মহিমান্বিত রজনী। লাইলাতুল কদরের অন্য নাম শবেকদর। কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। এ রাতে এত অধিকসংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন যে, সকাল না হওয়া পর্যন্ত এক অনন্য শান্তি বিরাজ করে পৃথিবীতে। লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য অপরিসীম। কোরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি একে নাজিল করেছি শবেকদরে। শবেকদর সম্পর্কে আপনি কী জানেন? শবেকদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে (কাদর : ১-৫)। যেহেতু এ রজনী অত্যন্ত মহিমান্বিত ও সম্মানিত, তাই এ রজনীকে লাইলাতুল কদর বলা হয়ে থাকে। আবার এ রাতে যেহেতু পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, সে কারণেও এ রজনীকে কদরের রজনী বলা হয়।

মহান আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন- নিশ্চয়ই আমি কোরআনুল কারিমকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, নিশ্চয় আমি তা (কোরআন) এক মোবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয় (দুখান : ১-৪)। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবেকদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন (তাফসিরে মাজহারি)।

পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতের মধ্যে কোনো একদিন লাইলাতুল কদর। তবে হাদিসে রয়েছে, আবহাওয়া বা ঝলমলে একটি প্রশান্তির রাত হবে সেদিন। এই রাতটি হবে খুবই শান্ত ও শান্তিময়। এই রাত শেষে সকালটি হবে প্রশান্তির। এ রাতে প্রত্যেক বস্তুকে সেজদারত অবস্থায় দেখা যাবে। প্রতিটি স্থান হবে স্বর্গীয় আলোয় আলোকিত। সবচেয়ে সুস্পষ্ট নিদর্শন হচ্ছে, এই রাতের এবাদত অন্তরে তৃপ্তি জোগাবে। এটি দোয়া কবুলের রাত। আমাদের ভাগ্যরজনী বা মহিমান্বিত রজনী। এই রাতেই আল্লাহতায়ালা আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করার উদ্দেশ্য হলো শবেকদর প্রাপ্তিতে দৃঢ়তা আনয়ন। এতেকাফের মূল কথা হলো সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়া।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর’ (মুসলিম : ১১৬৯)। আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায়, সেজন্য রাসুল (সা.) শেষ দশ দিনের পুরো সময়টাতে এতেকাফরত থাকতেন (মুসলিম : ১১৬৭)।

রাসুল (সা.) নিজে ‘লাইলাতুল কদর’ লাভ করার জন্য রমজানের শেষ ১০ রাত জাগ্রত থেকে ইবাদতে কাটিয়েছেন এবং উম্মতকে সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার নির্দেশ দিয়েছেন। লাইলাতুল কদরের ফজিলত অপরিসীম। তাই সারারাত জাগরণ করে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা কর্তব্য। বেশি বেশি নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ, উমরি কাজা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত,  দান-সাদকা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার, দুয়া-দরুদসহ ইত্যাদি নফল আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়া একান্ত জরুরি।

প্রভাষক, চাটখিল কামিল
মাদ্রাসা, নোয়াখালী

পাঠকের মতামত: